কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো - How to Start Freelancing Bangla

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো? এই প্রশ্নটি এখন অহরহ শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে বেকারত্বের হার এমন ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ভবিষ্যতে ভয়ংকর রুপ নিবে। তাই আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে লেখাপড়ার পাশা পাশি অথবা পার্ট টাইম জবের সাথে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ায় যুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ। এখন আপনার মনে প্রথম প্রশ্ন আসবে- কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো? ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ কি? ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে আমাকে কি জানতে হবে? ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি? ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি কি প্রয়োজন? ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পর সফলতা কতটা নিশ্চিত?... ইত্যাদি আরো বিভিন্ন প্রশ্ন। আর হ্যাঁ, যেখানে সমস্যা বেশি সেখানেই বেশি প্রশ্নের উৎপত্তি হয়। আর সকল প্রশ্নেরই নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট উত্তর থাকে।

আমরা এই নিবন্ধে আপনি কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন এর সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান দেওয়ার চেস্টা করবো। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং শুরু চান বা ফ্রিল্যান্সিং করবেন এমনটা ভেবেছেন তাহলে আপনার জন্য আজকের আর্টিক্যালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্দান্ত। এই নিবন্ধে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রথমিক জ্ঞান প্রদান করা হবে। আপনি ফ্রিল্যান্সিং কি সেটা জানেন এবং ফ্রিল্যান্সিং কাজ কিভাবে করতে হয় সেটাও জানেন কিন্তু আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বেসিক ধারণা বা জ্ঞান না থাকে তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে বেশিদুর এগোতে পারবেন না, এটা আমি শিউর। তাই আমরা যে কাজেই করি না কেন সেই কাজের বেসিক ধারনার গুরুত্ব অপরিসীম। তাহলে চলুন আজ আমরা বেসিক টা জানবোঃ

ফ্রিল্যান্সিং কিঃ

এখানে ফ্রিল্যান্সিং এর একটু বেসিক ধারণা দিয়ে রাখি, পরবর্তীতে বা নিম্নে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর এডভান্স ধারণা পাবো। ফ্রিল্যান্সিং মুলত আপনার দক্ষতার সার্ভিস প্রদান যেটা অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং কি? সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে বলা যার- আপনার দক্ষতার মাধ্যমে কতিপয় ব্যাক্তিকে সেবা প্রদান করা।

তাহলে আপনার বলতে পারি, ফ্রিল্যান্সিং একটি সেবা প্রদান কাজ, যার আর্থিক মুল্য আছে। ফ্রিল্যান্সিং এর কোন নির্ধারিত নির্দিষ্ট বেতন বা মুল্য নেই। আপনি যতটা কাজের চাপ নিতে পারবেন ততটা বা ততো বেশি ইনকাম করতে পারবেন। যাইহোক এখন আমরা পরবর্তী স্টেপ সম্পর্কে জানবো।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে আমাকে কি জানতে হবে?

এখন আমরা জানবো ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি কি জানা প্রয়োজন। আমি মনে করছি এই নিবন্ধন যারা পড়ছেন তাঁরা ফ্রিল্যান্সিং জগতে বিগিনিং, তাই আমার সর্বো প্রথম পরামর্শ হল আপনার কাছে খুব ভালো লাগে এমন কাজ গুলো নির্দিষ্ট করেন। যেমনঃ ওয়েব ডেভলোপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাপ্লিক্যাশন বিকাশ অথবা পাওয়ার পয়েন্ট।

ফ্রিল্যান্সিং, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো, how can i start freelance with no experience

একটি নিদিষ্ট দক্ষতা সিলেক্ট করে, সেই কাজের উপর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন অথবা বিভিন্ন ইউটুব চ্যানেল থেকে ভিডিও দেখে আয়ত্ত করতে পারেন। নিম্নে আমি সংক্ষেপে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে করতে কি কি জানা আবশ্যক তা তুলে ধরলাম।

১। কাজের দক্ষতাঃ আপনার নির্দিষ্ট কাজের উপর দক্ষতা থাকতে হবে। সেটা যে কাজেই হোক না কেন, আর ফ্রিল্যান্সিং ছোট থেকে বড় কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। তবে আমি সাজেস্ট করবো আপনি যদি দীর্ঘ দিন ধরে বা পেশা হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে ব্যতিক্রম কাজ শিখুন। এতে আপনার কাজের সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিযোগি কম থাকবে এবং উচ্চ মুল্যে সার্ভিস প্রদান করতে পারবেন।

২।ইংরেজিতে দক্ষতাঃ আপনাকে ইংরেজি জানতে হবে, কারন আপনার দক্ষতার মুল্য নিচ দেশে না থাকলেও বাইরের দেশের আছে। আর আপনার সার্ভিসগুলো বাইরের দেশের লোক কিনবে। সেক্ষেত্রে বাইরের দেশের লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে আপনাকে ইংরেজি ভালো জানতে হবে। আপনি প্রথম প্রথম গুগল ট্রান্সেলেট ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু অনেক দামি কাজ বা বায়ারের সাথে দীর্ঘ মেয়াদি প্রজেক্টের কাজ করতে আপনার সাথে বায়ার ভিডিও মিটিং করতে পারে। তাই ইংরেজি পরিপক্ষ জানা খুবই প্রয়োজন।

 ৩। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটঃ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আপনাকে কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে হবে। কম্পিউটার স্মার্ট হতে হবে- যেমনঃ মাউস ক্লিকের স্প্রিট ও টাইপিং মোটামুটি থাকতে হবে। কম্পিউটারে সাথে আপনার ইন্টারনেটের জ্ঞান থাকতে হবেন। যেমনঃ ব্রাউজিং করা, সফটওয়্যার ইনস্টল করা এবং অন্যান্য।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি কি প্রয়োজন?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে তেমন কোন জিনেসের প্রয়োজন হয় না। তবে কাজের ভিন্নতায় বিভিন্ন ডিভাইজের প্রয়োজন হয়। ফ্রিল্যান্সিং মোবাইল, ট্যাপ এবং পিসির মাধ্যমে করা যায়। তবে পিসি বা ল্যাপটপ থাকলে আপনি যেকোন কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন আর মোবাইলের মাধ্যমে কয়েকটি নির্দিষ্ট কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ?

এমন কোন কাজ নেই যা দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না। কিন্তু চাহিদা কম আর বেশি- যেটা ব্যতিক্রম কাজ বা নতুন টেকনোলজি কাজ সেটার চাহিদা কম থাকলেও ডিমেন্ট বেশি। আর যেটার চাহিদ বেশি সেটার প্রতিযোগিতাও বেশি এবং ডিমান্টও কম। নিম্নে ৫ টি চাহিদা ও ডিমান্ট সম্পূর্ণ কাজ তুলে ধরলাম।

১। গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ এর চাহিদা এবং ডিমান্ট দুইটাই আছে এবং প্রতিযোগিতাও অনেক। গ্রাফিক্স ডিজাইনের আওতায় অনেকগুলো সেক্টর আছে। যেমনঃ লোগো ডিজাইন, পেপার ডিজাইন, টিশার্ট ডিজাইন, বই কভার ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, ছবি ইডিট ইত্যাদি। আপনি যেকোন একটি সেক্ট্রের উপর কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন এবং আস্তে আস্তে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন।

২। ওয়েব ডেভলোপমেন্টঃ ওয়েব ডেভলোপমেন্ট একটি জনপ্রিয় ও প্রতিযোগিতা মূলক কাজ। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের চেয়ে ওয়েব ডেভলোপমেন্ট কাজের প্রতিযোগিতা তুলনা মূলক কম। এই কাজ শিখতে একটু সময় বেশি লাগে এবং এই কাজের জন্য নিজেকে পরিশ্রমী এবং শান্ত হতে হবে।

৩। ডিজিটাল মার্কেটিং: এর কাজের পরিধি ব্যাপক। যেকোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেজের সকল কাজের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ কাজ ডিজিটাল মার্কেটিং কাজে অন্তভুক্ত। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রায় সকল কাজ অন্যান্য কাজের তুলনায় সহজ এবং এর কাজ মোবাইলের মাধ্যমেও করা যায়।

৪। ভিডিও ইডিটিং / সম্পাদনঃ আপনি ভিডিও ইডিটিং কাজ ভালো পারলে আপনি এই সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেজে ভিডিও ইডিটিং এর কাজ খুবই জনপ্রিয়।

৫। অ্যানিমেশনঃ অ্যানিমেশনের কাজ ব্যাপক জনপ্রিয়। এটি একটি ডিমান্ট ফুল কাজ, এখানে 2D, 3D কার্টুন অ্যানিমেশন এবং পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড অ্যানিমেশনের কাজ প্রচুর পাওয়া যায়। অন্যান্য কাজের তুলনায় এই কাজে প্রতিযোগিতা খুবই কম এবং ৩০-৬০ সেকেন্ডে ভিডিও অ্যানিমেশনের জন্য ২০- ১০০ ডলার পর্যন্ত অর্ডার পাওয়া যায়।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ কোথায় থেকে শিখবেনঃ

আপনি লাইভ টাইম ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে আপনাকে কাজের দক্ষতা উন্নত করতে হবে। তাই আপনি যদি উপরের আলোচিত ১, ২, ৩ নাম্বারে কাজ গুলো শিখতে চান তাহলে আপনি একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নিন। আবার ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক কাজ ইউটুব দেখে শেখা যায়, তবে ইউটুব দেখে শিখতে অনেক সময় লাগে। যাইহোক আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চান তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন তারপর ভর্তি হন। প্রয়োজনে পূর্বের ব্যাচের বড় ভাইদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য নিন। কেন না অনেকেই উচ্চ মুল্যে এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে কিন্তু পরে দেখা গেছে তাঁরা কিছুই শেখাতে পারে নাই।

তাই আপনি যদি প্রশিক্ষণ নিতে চান তাহলে এমন প্রতিষ্ঠানে বিবেচনা পূর্বক ভর্তি হন যেখানে আপনার অর্থ এবং সময় অবচয় না হয়। অনেকে অনলাইনে ভিডিও ক্লাসের মাধ্যনে কোর্চ করে আমি এটিকে পুরপুরি সমর্থন করি না। কারন অনলাইন ভিডিও ক্লাসের মাধ্যমে বেসিক শিখতে পারবেন কিন্তু অ্যাডভান্স লেভেলের কিছুই শিখতে পারবেন না।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পর সফলতা কতটা নিশ্চিত?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পর সফলতা আপনার দক্ষতা ও পরিশ্রমের উপর নির্ভর করবে। ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতার জন্য আপনাকে প্রথমে টাকা আয় করার চিন্তা না করে দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং নিজের কাজকে ভালোবাসতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post